জন্ম থেকেই আমার চার হাত-পা অচল। তবে এক হাত দিয়ে সামান্য কিছু ধরতে পারি। তা দিয়েই রিক্সা চালাই, আমার এ অবস্থা দেখে ভয়ে যাত্রী উঠতে চায় না রিক্সায়। যারা আমার পরিচিত অথবা রিক্সা পায় না শুধু তারাই আমারটায় উঠে। হতাশাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো জানাচ্ছিলেন, জীবনযুদ্ধে ছুটে চলা প্রতিবন্ধী আসাদুল ইসলাম(২৫)। ভিক্ষা না করে অর্থ উপার্জনের জন্য বেছে নিয়েছেন ড্রাইভারী পেশা। জীবিকার তাগিদে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে, দেহের অপারগতা দূরে ঠেলে দিয়ে , অটো নিয়ে ছুটে চলছে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায়।
প্রতিবন্ধী আসাদুল গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী থানাধীন ১২নং ওয়ার্ডের কুদ্দুসনগর এলাকায় বাসাভাড়া থেকে ভাড়া করা অটোরিক্সা চালিয়ে আসছে।
সে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপাড়া থানার চালিতাডাঙ্গা গ্রামের খোকা শেখ ও শাহেনা খাতুনের বড় ছেলে।
মা-বাবা ও ২ বছরের মেয়ে ফাতেনাসহ মোট ৭ সদস্যের পরিবার তার। তিন ভাই বোনের মধ্যে আসাদুল সবার বড় হওয়ায় সংসারের দায়িত্বটা তার কাঁধেই পড়েছে।
ভাড়ায় চালিত অটোরিক্সার বিভিন্ন অংশ সংযোজন ও বর্ধিত করে পায়ের হাঁটু ও হাতের কুনুই দিয়ে ব্রেক, গিয়ার ও হ্যান্ডেল নিয়ন্ত্রণ করে চালান তিনি। একদিন ইনকাম না হলে মুখে ভাত যে উঠে না তার। দারিদ্র্যের চপেটাঘাতে জীবন যখন ওষ্ঠাগত, ঠিক তখনই মরার উপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে উঠলো বাবার অসুস্থতা।
প্রতিবন্ধী আসাদুল জানায়, যেখানে আমি সংসারের উপর নির্ভর থাকতাম, সেখানে আমিই সংসার চালাচ্ছি।
সংসারের খরচ মেটাতে প্রতিদিন আমাকে অটোরিকশা নিয়ে ছুটতে হয়। বাবা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে ক্ষুধার যন্ত্রণায় অচল হাত-পা দিয়ে গত ৩ বছর ধরে রিক্সা চালাচ্ছি।
চোখের কোনায় জল নিয়ে ভারী কন্ঠে
তিনি আরো জানান, প্রতিদিন মালিকের ভাড়ার টাকা পরিশোধ করে যা থাকে তা দিয়ে কোন মতে সংসার চালিয়ে নেই। অটোরিক্সা কেনার সামর্থ্য না থাকায় ভাড়ায় চালাচ্ছি। নিজের যদি একটা অটোরিক্সা থাকত তাহলে সংসারের খরচ ভালমতন মেটাতে পারতাম।
পরিবার ও পরিচিতজনদের দাবি, প্রতিবন্ধী আসাদুলকে সহযোগিতার হাত বাড়ানো গেলে সচ্ছলভাবে নিজেই সংসার চালাতে পারতো।